
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলমান সাধারণ ছুটি ৩০ মে’র পর আর বাড়ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হবে অফিস-আদালত। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ থাকবে। আর সীমিত আকারে চলবে গণপরিবহন। ২৭ মে বুধবার বিকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আগামীকাল ২৮ মে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন আমরা এ মাত্র পেয়েছি। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় আড়াই মাসের মতো সাধারণ ছুটি চলছে, যেটা গত ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। তবে এবার ৩০ মে’র পর আর ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩১ মে থেকে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তবে জুনের মাঝামাঝি মানে ১৫ জুনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা সবাইকে বেঁধে দেয়া হচ্ছে, এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, এ সময় গণপরিবহন চলবে সীমিত আকারে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে। গণজমায়েত ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয় খোলা থাকবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ক্রমে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হতে থাকে। সরকারী অফিস-আদালতের ঘোষিত ছুটির সঙ্গে বন্ধ রাখা হয় দেশের সব দোকানপাট ও শপিংমল। এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ২৯ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব বিপণি বিতান ও মার্কেটগুলো। তবে ৩০ মে থেকে মার্কেট খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি।
উল্লেখ্য, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলা হয়েছিলো সারাদেশের দোকানপাটগুলো। সেই সাথে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মহানগর দোকান মালিক সমিতির গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহানগরের সব বাণিজ্য বিতান ও শপিং মল ঈদের দিন থেকে ২৯ মে শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ফলে আগামী ৩০ মে শনিবার থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিধি-নিষেধ মেনে যথানিয়মে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে বলে জানা গেছে।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা এখনো চরম পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও ১৫৪১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ হাজার ২৯২ জনে। এছাড়া একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪৪ জনে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে অচলাবস্থা কাটাতে অফিস-আদালত খুলতে চাচ্ছে সরকার।
সে জন্য ৩০শে মে’র পর থেকে সাধারণ ছুটি আর বাড়ানো হবে না। তবে ৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। এই সময়ে বাস, রেল ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলবে সীমিত পরিসরে। তবে বিমান সংস্থাগুলো বিমান চলাচল চালু করতে পারবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহন চলবে। তবে একজেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করা হবে। জেলায় প্রবেশ বা বর্হিগমন পথে চেকপোস্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, বয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবর্তী মহিলারা কর্মস্থলে যোগদান থেকে বিরত থাকবেন। অন্যান্য কর্মকর্তারা ১৩টি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করবেন।
তিনি আরো বলেন, সভা-সমাবেশ বা গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামায ও ধর্মীয় প্রার্থনা চলবে।
এ ছাড়াও মন্ত্রী বলেন, রাত আটটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত মানুষজনের বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটা বহাল থাকবে। এই সময়ে অকারণে বাইরে বের হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের দোকানপাট সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে।
আরও কিছু আর্টিকেল
তালেবান মুজাহিদদের হামলায় ১৪ মুরতাদ সৈন্য নিহত
কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৪০০ তালেবান
চলে গেলেন করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম